চীনাবাদাম এর আদি উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকো। আদি উৎস আমেরিকা হলেও বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশ, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মধ্য আফ্রিকা, মাদাগাস্কারসহ আরো অনেক উষ্ন্ম মন্ডলীয় দেশে চীনাবাদামের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের দেশের চরাঞ্চল বিশেষ করে চট্টগ্রাম, বরিশাল, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, নোয়াখালী, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন চরাঞ্চলে বাদাম উৎপাদন হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে অনুসারে, প্রতি বছর দেশের ১০টি অঞ্চলে ৮৫-৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টন বাদাম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে বাদামের চাষ হয় বেশি। বিগত কয়েক বছর ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কবোতাক্ষ নদীর কূলবর্তী অঞ্চল বেলে, বেলে, দো-আঁশ মাটি হওয়ায় এখানে কৃষকরা চীনাবাদাম এর চাষ করছেন এবং ভালো ফলন পাচ্ছেন। বপনের সময় : বছরের যে কোনো সময় এর চাষ করা যায়, তবে রবি মৌসুমে মধ্য অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত (০১ কার্তিক হতে ১৫ ফাল্গুন) এবং খরিফ মৌসুমে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (আষাঢ়-আশ্বিন) পর্যন্ত বীজ বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।চীনাবাদাম বীজ খুবই স্পর্শকাতর বা সংবেদনশীল। যখন গাছের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ বাদাম পরিপক্ব হবে তখনই চীনাবাদাম তোলার উপযুক্ত সময়। পরিপক্ব হলে বাদামের খোসার শিরা-উপশিরাগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং গাছের পাতাগুলো হলুদ রঙ ধারণ করে নিচের পাতা ঝড়ে পড়তে থাকে। বাদামের খোসা ভাঙার পর খোসার ভেতরে সাদা কালচে রঙ ধারণ করলেই বুঝতে হবে ফসল উঠানোর উপযুক্ত সময় হয়েছে। পরিপক্ব হওয়ার আগে বাদাম উঠালে তা ফল ও তেল কম হবে। আবার দেরিতে উঠালে বীজের সুপ্ততা না থাকার দরুন জমিতেই অংকুরিত হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদীর কূলবর্তী অঞ্চলের পুরুষ কৃষকের পাশাপাশি নারী কৃষানিরা বাদাম বাছাই ও প্রস্তুত করার কাজে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকেন।
প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও তেলের জরুরি উৎস বাদাম। পরিমিত পরিমাণে বাদাম খেলে সুস্থ থাকা সম্ভব। অনেক রকমের বাদাম বিশ্বে উৎপাদিত হয়। সব বাদামই পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। যেমন, চিনাবাদামে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন-এ, বি, সি রয়েছে। ভোরবেলা খালি পেটে বাদাম খেলে এনার্জি পাওয়া যায়। বাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বাদামে রয়েছে প্রচুর চর্বি। এটি থেকে আসে প্রচুর ক্যালরি। বাদাম প্রোটিনের অনেক ভালো উৎস। বাদামে প্রচুর আঁশ থাকে। বাজারে অনেক রকমের বাদাম কিনতে পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাদামটির নাম চিনাবাদাম। অন্যান্য বাদামের তুলনায় চিনাবাদাম সহজলভ্য বলেই হয়তো অনেকে একে তেমন গুরুত্ব দিতে চান না। কিন্তু খাদ্যগুণে চিনাবাদাম কোনো অংশেই কম নয়। সবচেয়ে বেশি উপকার মিলবে ভাজা বাদামের বদলে কাঁচা বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করলে। কাঁচা হজম করতে না পারলে পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া যেতে পারে। বাদামের ওপর পাতলা বাদামি বা খয়েরি রঙের আবরণ থাকে। পানিতে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলেই খোসাটা উঠে যায়। গর্ভবতী মহিলা, বাড়ন্ত শিশু ও মেনোপোজ হয়ে গেছে এমন নারীদের জন্যও কাঁচা বাদাম ভীষণ জরুরি। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। বাদামের প্রোটিন দেহ গঠনে ও মাংসপেশী তৈরিতে সাহায্য করে। কাঁচা বাদাম কোলন ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ও হার্টের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, যা হাড় গঠনে সাহায্য করে। বাদামে রয়েছে প্রচুর আয়রন, যা রক্তে লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। বাদামের ভিটামিন ই এবং ক্যারোটিন ত্বক ও চুল সুন্দর রাখে। ত্বকে বলিরেখা বিলম্বিত করে।বয়স্ক নারী ও পুরুষের জন্যও বাদাম ভীষণ জরুরি। কারণ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে আমাদের দেশে ৪০ বছরের পর বেশির ভাগ মানুষের অসটিও পোরোসিস হয়, এই অসুখে হাড় দুর্বল হয়ে যায়, যা পুরো শরীরের ওপর ফেলে ক্ষতিকর প্রভাব। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন দেহের ওজন কমানো, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়মিত ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।মেনোপোজ হয়ে যাওয়া নারীদের হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁদের দেহে জরুরি অনেক হরমোন তৈরি হয় না এমন অবস্থায়ও কাঁচা বাদাম হতে পারে আপনার বন্ধু। এতে শরীরের জন্য জরুরি অনেক উপকরণ রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ত্বকে জোগায় পুষ্টি, সাহায্য করে বার্ধক্যকে দূরে ঠেলতে। ত্বকের অসুখগুলোকে দূরে রাখে। দাঁত, হাড়, নখ, চুলকে উজ্জ্বল ও সুন্দর করতে এই বাদামের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তবে সবাই হজম করতে পারে না। অবশ্যই নিজের হজমক্ষমতা বুঝে বাদাম খান ৷